একদিকে, যখন রাজ্যের ডিআই অফিসগুলিতে 'যোগ্য' ও 'অযোগ্য' শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাঠানো সর্বশেষ তালিকা নিয়েও ত্রুটির অভিযোগ উঠছে, সেই প্রেক্ষাপটে রাজ্য সরকার তথা কর্তৃপক্ষের তরফে কেন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের (বিভিন্ন স্কুলের গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মী) 'যোগ্য' ও 'অযোগ্য' তালিকা প্রকাশ করা হল না, সেই দাবি জোরালো হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে চাকিহারা শিক্ষাকর্মীদের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মাসিক ভাতা ঘোষণা করা হলেও অনশন-আন্দোলনের পথ থেকে সরছেন না চাকরিহারা 'যোগ্য' শিক্ষাকর্মীরা। তবে এবার আর নির্জলা অনশন করবেন না তাঁরা।উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর ২০১৬ সালের প্রায় সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তাতে সব মিলিয়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে। এঁদের মধ্য়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে যাঁরা চিহ্নিত 'দাগী' নন, তাঁদের আগামী ৩১ ডিসেম্বর (২০২৫) স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু, তার মধ্য়েই কর্তৃপক্ষকে নতুন করে সংশ্লিষ্টদের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে হবে।অন্যদিকে, চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ক্ষেত্রে তেমন কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় রাজ্য সরকারের তরফে তাঁদের জন্য আপাতত মাসিক ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রুপ সি কর্মীদের মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে।এর প্রেক্ষিতে চাকরিহারারা বলছেন, তাঁরা ওই ভাতা নেবেন। কারণ, সংসার চালাতে টাকা দরকার। কিন্তু, তাঁরা ভাতা পাওয়ার জন্য আন্দোলনে নামেননি। তাঁদের দাবি, তাঁরা 'যোগ্য' বলেই চাকরি পেয়েছেন। এবং তাঁরা সম্মানের সঙ্গে সেই চাকরি ফেরত পেতে চান। একইসঙ্গে তাঁদের প্রশ্ন, কেন রাজ্য প্রশাসন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ক্ষেত্রেও 'যোগ্য' ও 'অযোগ্য' তালিকা প্রকাশ করছে না?এর আগে মধ্যশিক্ষা দফতরের ভিতর আটজন শিক্ষাকর্মী অনশন শুরু করেছিলেন। কিন্তু, তাঁদের মধ্য়ে চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।এদিকে, গতকাল (শনিবার - ২৬ এপ্রিল, ২০২৫) নবান্নের পক্ষ থেকে চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের জন্য মাসিক ভাতা ঘোষণা করা হয়। সেইসঙ্গে, জানানো হয় - শিক্ষকদের মতোই শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিলের ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকার আদালতে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে। এবং যত দিন মামলা চলবে, তত দিন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই মাসিক ভাতা প্রদান করা হবে।কিন্তু, এই অবস্থাতেও হারানো চাকরি ফেরত পাওয়া নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা। তাঁরা সেই চাকরি ফেরত চান। পাশাপাশি, তাঁরা 'যোগ্য' ও 'অযোগ্য'দের নির্দিষ্ট পৃথকীকরণও চাইছেন। মূলত, এই দাবিগুলিকে সামনে রেখেই অনশন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তবে, এবার থেকে তাঁরা অনশনে থাকাকালীন খাবার না খেলেও জল খাবেন। যাতে অসুস্থ হয়ে আন্দোলনস্থল ছাড়তে না হয়।