সৃজিত মুখোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছেন যে তিনি আর ফেলুদা বানাবেন না। তখন থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল তবে কি হইচই ফ্ল্যাটফর্মে আসবে না সত্যজিৎ রায়ের এই অনন্য সৃষ্টি? কিন্তু সম্প্রতি SVF এবং হইচইয়ের গল্পের পার্বণ অনুষ্ঠানে জানা গেল ফেলুদার দায়িত্ব নিলেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। তিনি এবার পরিচালনা করবেন এই সিরিজের। ফেলুদা ত্রয়ী একই থাকবে, খালি বদলে গেল পরিচালক। আর তারপরই এদিন বিদায়ী পরিচালকের জন্য আবেগঘন পোস্ট লিখলেন টোটা রায়চৌধুরী।
কী ঘটেছে?
সৃজিত মুখোপাধ্যায় দায়িত্ব ছাড়তে হইচইয়ের হয়ে এবার ফেলুদা পরিচালনা করবেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। সদ্যই জানা গিয়েছে সেই তথ্য। ফেলুদা ত্রয়ী যদিও একই থাকবে। এদিন সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে টোটা রায়চৌধুরী একটি পোস্টে ধন্যবাদ জানালেন তাঁকে ভরসা করার জন্য, ফেলুদা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। টোটা এদিন তাঁর পোস্টে লেখেন, 'ওপরের ছবিটি ২৪শে ডিসেম্বর, ২০১৯-এ তোলা। আপাতদৃষ্টিতে চেহারায় আলগা নিশ্চিন্ততা পরিস্ফুট হলেও পেটে প্রজাপতির অবিরাম ওড়াওড়ি। স্বপ্নের চরিত্রে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই কয়েক রাউন্ড তুমুল গালমন্দের সম্মুখীন হয়ে ফেলুদার সেটে আমার প্রথম দিন। তার ওপর দুই সুউচ্চ পর্বতপ্রমাণ প্রবাদপ্রতিমদের সঙ্গে তুলনা হওয়ার ভয় পরিচালকের বরাভয়েও কাটছে না। ফেলুদা হওয়ার প্রচেষ্টার প্রথম পদক্ষেপ (এখনও অবশ্য হয়ে উঠতে পারিনি তবে work in progress) এবং ত্রয়ীর পথচলার হাঁটি হাঁটি পা পা। নীচের ছবিটি ২৫শে মার্চ, ২০২৪-এ তোলা। ততদিনে দুটো আলাদা প্ল্যাটফর্মে দুটো সিজন স্ট্রিম হয়ে গেছে। বহুল সংখ্যক দর্শক এই ত্রয়ীকে গ্রহণ করেছেন এবং বেশ কিছু মানুষ নিজগুণে আপন করেও নিয়েছেন (তাঁদের কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। এক শ্রেনীর গালাগাল অবশ্য এখনও পিছু ছাড়েনি তবে চামড়া এখন কাজিরাঙ্গার রাইনো! স্বর্গীয় পরিবেশে ফেলুদা বেশে ভূস্বর্গে সে মুহূর্তে আবহ আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! তখনও জানি না যে এটাই ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে আমাদের শেষ ইনিংস।'
অভিনেতা এদিন আরও লেখেন, 'গত পাঁচ বছরে, ফোর মাস্কেটিয়ার্স, চারটে সিজন করলাম দুটো আলাদা প্ল্যাটফর্মে। একটা সিজনের স্ট্রিমিং অবশ্য এখনও হয়নি। তবে দুটো প্ল্যাটফর্মেই দর্শক সংখ্যায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে সৃজিত মুখুজ্জের ফেলুদা। সেটা অবশ্যই রায় সাহেবের স্বর্ণ লেখনী এবং কিংবদন্তি চরিত্রের অমরত্ব হেতু। তবে তৎসহ সৃজিত মুখার্জির ফেলুদাপ্রীতি, সত্যজিৎ-ভক্তি ও পরিচালনার মেধা,মুনশিয়ানাকে কৃতিত্ব দেওয়া না হলে সেটা নিছক নিন্দুকের এক চোখামি হবে, সমালোচকের নিরপেক্ষতা নয়।'
পর্দার ফেলুদার কথায়, 'এবার ত্রয়ী পথ চলবে আরেক শক্তিশালী পরিচালকের হাত ধরে। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গভীরতা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা সর্বজনবিদিত। আশা করি এবারও আপনাদের আশীর্বাদ ও ভালবাসা প্রাপ্তি হবে। তবে বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই যে সৃজিত মুখোপাধ্যায় যদি স্রোতের বিপরীতে সন্তরণ করে, আমার ওপর বিশ্বাস না রাখত এবং পরবর্তীতে মাতৃসম স্নেহে আমায় ফেলুদার চরিত্রে গড়ে না তুলতো; তাহলে আজ আমার একমাত্র স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যেত। আর হ্যাঁ, ফেলুদা রূপে সমস্ত ত্রুটি বিচ্যুতি, দোষ, খামতি একান্তই আমার অক্ষমতা প্রসূত। পরিচালকের ধৈর্য, নিষ্ঠা ও সক্ষমতা সত্ত্বেও। ক্ষমা করে দিও, ক্যাপ্টেন। আর আশা করি জীবনপথের কোনো বাঁকে আবার দেখা হয়ে যাবে। তোমার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আজীবনের। ভালো থেকো।'