সুপ্রিম কোর্টে আজ আরজি কর কাণ্ডের মামলার শুনানি চলাকালীন প্রশ্নবিদ্ধ হয় পুলিশ এবং আরজি কর প্রশাসন। প্রশাসনের ভূমিকায় আজ শীর্ষ আদালত উষ্মা প্রকাশ করে। এদিকে রাজ্যের হয়ে সওয়াল করা কপিল সিব্বল একাধিক প্রশ্নের জবাবে যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করেও আমতা আমতা করলেন। আজ বিচারপতিরা যখন জিজ্ঞেস করেন যে এফআইআর কে, কখন করেছে, তখন সেই জবাব জানাই ছিল না কপিল সিব্বলের। পিছনে জুনিয়রদের দিকে ঘুরে তিনি জবাবের সন্ধান করেন। আর খবরের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি যেই সব অভিযোগের প্রসঙ্গ তুললেন, তার জবাবে সিব্বল বলে গেলেন, 'এটা ঠিক নয়, এটা সত্যি নয়...'
আজ প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন করেন, 'সকালে দেহ উদ্ধার হওয়ার পরও প্রিন্সিপাল কেন বিষয়টাকে সুইসাইড বলার চেষ্টা করলেন?' জবাবে সিব্বল বলেন, 'এটা সত্যি নয়।' এরপর প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, 'বাবা-মাকে সন্তানের দেহ দেখতে দেওয়া হল না কেন?' এর জবাবেও সিব্বল বলেন, 'এটা ঠিক নয়।' পরে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, 'রাত পর্যন্ত কোনও এফআইআর হল না কেন?' জবাবে সিব্বল বলেন, 'এটাও ঠিক নয়। ময়নাতদন্তের পর এফআইআর হয়।' পরে বিচারপতি জিজ্ঞেস করেন প্রথম যে মামলা করা হয়, তাতে খুনের কথা উল্লেখ ছিল? জবাবে সিব্বল বলেন, 'না, অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা লেখা হয়।'
এরপরই বিচারপতি পারদিওয়ালা প্রশ্ন করেন, 'কে প্রথম এফআইআর করেন?' প্রথমে জবাব না জেনে সিব্বল পিছনে ঘুরে জুনিয়র এবং সহকারীদের থেকে জবাব জানতে চান। পরে বলেন, 'হাসপাতালের ভাইস প্রিন্সিপাল এবং মৃতার বাবা'। এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, 'একসঙ্গে দুটো এফআইআর কী করে হয়?' এরপর নিজের ভুল শুধরে সিব্বল বললেন, 'নির্যাতিতার বাবার এফআইআর গ্রহণ করে পুলিশ।' জানানো হয়, রাত পৌনে ১২টায় এফআইআর করা হয়। কেন এত দেরিতে এফআইআর হয়? এই প্রশ্নের জবাবে কার্যত নির্যাতিতার পরিবারের ঘাড়ে দোষ ঠেলে সিব্বল বলেন, 'ওরা বলছিল যা করার করুন, আমরা শকে আছে।' এরপর সুপ্রিম কোর্ট বলেন, এফআইআর তো আগে হাসপাতালেরই করা উচিত ছিল।
সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে প্রশ্ন করা হয়, একজন চিকিৎসক খুন হলেন রাতে। দেহ উদ্ধার হল সকালে। এরপর অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের হয়। তবে খুনের মামলা রুজু হয় রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে। নির্যাতিতার বাবা গিয়ে এফআইআর করেন। তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী করল? এর আগে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সন্দীপ ঘোষ আরজি করের অধ্যক্ষ পদে ইস্তফা দেওয়ার পর কী ভাবে আবার অন্য কোথাও যোগ দিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেন, 'প্রথমে ঠিক ভাবে এফআইআর করা হয়নি। পুলিশ কী করছিল? একটা হাসপাতালের মধ্যে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। পুলিশ কি হাসপাতাল ভাঙচুর করার অনুমতি দিচ্ছিল?'
প্রধান বিচারপতি আজ আরও বলেন, 'বিকেলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয় খুন। এফআইআর দায়ের হয়েছিল রাত ১১টা ৪৫মিনিটে। তার আগে কী করছিলেন অধ্যক্ষ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ? ওই সময়ে মৃতার বাবা-মা ছিলেন না। হাসপাতালের দায়িত্ব ছিল এফআইআর দায়ের করা।' এদিকে রাজ্যের তরফ থেকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল যুক্তি সাজাতে চেষ্টা করেন। অপরদিকে প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে কী করা হবে বলে প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। তার জবাবে কপিল সিব্বল বলেন, শীর্ষ আদালত যা বলবে তাই করব। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রাজ্য সরকার যেন শান্তিপ্রিয় প্রতিবাদীদের ওপর কোনও বল প্রয়োগ করা যাবে না। এদিকে সিবিআইকে আগামী ২৩ তারিখের শুনানিতে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।