কোভিডের লক-ডাউনে সারা বিশ্বে যখন চার দেওয়ালে আবদ্ধ, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ প্রাধান্য পেতে থাকে সেই থেকেই। তবে তার আগেও যে মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগের শিকার হননি কেউ, এমনটা নয় মোটেও। ক্রীড়াজগতে অতীতে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অবসাদের শিকার হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিতে দেখা গিয়েছে বহু ক্রীড়াবিদকে। সেই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন গ্রাহাম থর্প।
মাত্র ৫৫ বছর বয়সে প্রয়াত হন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার থর্প। পরে তাঁর পরিবারের তরফে জানানো হয় যে, অবসাদের ভুগতে থাকা গ্রাহাম আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। প্রাক্তন ইংল্যান্ড তারকার প্রসঙ্গ সামনে রেখে মঙ্গলবার রবিন উথাপ্পা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন, যেখানে তাঁকে স্বীকার করতে দেখা যায় যে, একসময় তিনি নিজেও এমন পরিস্থিতিতে ছিলেন।
অর্থাৎ, একদা মানসিক অবসাদে ভুগতেন টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন তারকা। সেই গল্পই তিনি ভাগ করে নেন অনুরাগীদের সঙ্গে এবং সকলে মিলে অবসাদের এই বৃত্ত ভেঙে ফেলার ডাক দেন। পরামর্শ দেন মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার এবং অন্ধকারের মাঝেও আলোর দিশা খোঁজার।
উত্থাপ্পা নিজের ভিডিয়ো বার্তার ক্যাপশনে লেখেন, ‘ক্রিকেটের মাঠে অনেক কঠিন লড়াই লড়েছি। তবে অবসাদের সঙ্গে লড়াই করার মতো কঠিন ছিল না কোনও কিছুই। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমি নীরবতা ভাঙছি কারণ, আমি জানি আমি একা নই। আপনার ভালো থাকাকে গুরুত্ব দিন। প্রয়োজনে সাহায্য চান এবং আঁধারের মাঝেই আশার আলোর খোঁজ করুন।’
২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য উথাপ্পা নিজের ভিডিয়োয় জানান যে, তিনি ২০১১ সালে মানসিক অবসাদে ভুগতেন। তাঁর কথায়, ‘২০১১ সালে মানুষ হিসেবে নিজেকে নিয়েই লজ্জিত ছিলাম। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সংশয়ে থাকা এমন কিছু অস্বাভাবিক নয়। তবে বিশেষ কোনও মুহূর্তে সেটাই নিজেকে মূল্যহীন মনে করায়।’
উথাপ্পা বলেন, ‘সম্প্রতি আমি গ্রাহাম থর্পের কথা শুনলাম। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ক্রিকেটারকেই অবসাদের শিকার হয়ে আত্মহননের পথে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। একসময় আমি নিজেও সেই পরিস্থিতিতে ছিলাম। এটা নিঃসন্দেহে অপ্রীতিকর। এটা দুর্বল করে দেয়। মনে হয়, যাঁদের আপনি ভালোবাসেন, তাঁদের কাছে আপনি একটা বোঝা। এটা নিতান্ত চ্যালেঞ্জিং। মনে হয় যেন আপনার বেঁচে থাকাই অর্থহীন।'
রবিন আরও যোগ করেন, ‘নিজেকে নিতান্ত আশাহত মনে হয়। মনে হয় যেন প্রতিটি পদক্ষেপ ক্রমশ ভারি হয়ে আসছে। নিজেকে স্থাবর মনে হয় একসময়। সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস এবং বছর কেটে গিয়েছে, বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করত না। আমার মনে আছে, ২০১১ সালে আয়নার সামনে দাঁড়াতে লজ্জা করত। সারা বছর আমি আয়নায় নিজের চেহারা দেখিনি।’