ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলির হঠাৎ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা সকলকে অবাক করে দিয়েছে। সোমবার (১২ মে) ইনস্টাগ্রামে দেওয়া তাঁর একটি পোস্টে প্রকাশিত হয় এবং মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় ১.৮ কোটি রিঅ্যাকশন পায়, তাতে অবসরের কারণ নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা ছিল না। বিসিসিআই এবং নির্বাচকরাও এই ঘোষণায় অবাক হয়ে যান। ইংল্যান্ড সফরের টেস্ট সিরিজের জন্য নির্বাচকদের বৈঠকের ঠিক আগে এই ঘোষণা আসায় ব্যাপক জল্পনা শুরু হয়েছে।
প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার মহম্মদ কাইফ মনে করেন, কোহলির পরিকল্পনায় ইংল্যান্ড সিরিজ ছিল। তাঁর এই দাবি কোহলির রঞ্জি ট্রফি খেলার প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করে, যা তিনি অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে করেছিলেন। তবে কাইফ মনে করেন, অজিত আগারকর-নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটির কাছ থেকে কোহলি প্রত্যাশিত সমর্থন পাননি। নির্বাচকেরা তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং তাঁর টেস্ট দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
মহম্মদ কাইফ NDTV-কে বলেন, ‘আমি মনে করি, কোহলি এই ফরম্যাট চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। বিসিসিআই’র সঙ্গে নিশ্চয়ই কিছু অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে, নির্বাচকরা হয়তো গত ৫-৬ বছরের ফর্ম তুলে ধরে তাঁকে বলেছে, দলে তাঁর জায়গা আর নিশ্চিত নয়। কী ঘটেছিল, সেটা হয়তো আমরা কোনও দিনই জানতে পারব না, এটা অনুমান করা কঠিন।’
মহম্মদ কাইফ আরও বলেন, ‘কিন্তু শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত এবং রঞ্জি খেলার পর আমি নিশ্চিত, তিনি আসন্ন টেস্ট সিরিজে ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু শেষ কয়েক সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহ এবং নির্বাচক ও বোর্ডের কাছ থেকে যে সমর্থন পাওয়ার কথা তিনি ভেবেছিলেন, সেটা সম্ভবত তিনি পাননি।’
আরও পড়ুন … হংকং ম্যাচের পরেই কি ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করবেন মানোলো? জল্পনা তুঙ্গে
‘অস্ট্রেলিয়ায় কোহলি রান করতে যেন খুব তাড়াহুড়ো করছিলেন’
গত পাঁচ বছরে কোহলির ফর্মে ধস নামে। ৬৮ ইনিংসে তিনি করেন মাত্র ২০২৮ রান, তিনটি শতরান সহ। তাঁর কেরিয়ার গড়ও নেমে আসে ৪৬-এ। ২০২৪ সালের নভেম্বরে পার্থে একটি শতরান করে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দিলেও, বাকি সিরিজে আর মাত্র ৯০ রান করতে পারেন এবং ভারত ১-৩ ব্যবধানে সিরিজ হারে।
আরও পড়ুন … সুপারবেট ক্লাসিকের শীর্ষস্থানে ৩ জনের সঙ্গে প্রজ্ঞানন্দের লড়াই! জয়ের খোঁজে গুকেশ
মহম্মদ কাইফ মনে করেন, অস্ট্রেলিয়ায় কোহলির অস্বাভাবিক ব্যাটিং মানসিকতা ছিল এটার ইঙ্গিত যে তিনি হয়তো এই ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ভাবছিলেন। মহম্মদ কাইফ বলেন, ‘২০২৪-২৫ বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে, তিনি যেন দ্রুত রান করতে চাইছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে ঘন্টার পর ঘণ্টা উইকেটে থেকে লড়তে হয়, যা সে অতীতে করেছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর বল ছেড়ে দেওয়া, ধৈর্য্য দেখানো সেই চেনা রূপটা ছিল না। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে বারবার ড্রাইভ করতে গিয়ে আউট হওয়া দেখে মনে হয়েছে তাঁর ধৈর্য্য কমে গেছে।’
আরও পড়ুন … মুস্তাফিজুর IPL 2025-এ খেলবেন না! UAE উড়ে গেলেন বাংলাদেশের পেসার, কী বলল BCB?
মহম্মদ কাইফ এরপরে বলেন, ‘হয়তো তাঁর মনে হয়েছিল, ‘কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে আর ধৈর্য ধরে সেঞ্চুরি করেই বা কী লাভ।’ আগে তিনি বোলারদের ক্লান্ত করে পরে আক্রমণ করতেন, কিন্তু এটা অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায়নি। বারবার স্লিপে একরকম কায়দায় আউট হওয়াটা দেখায়, তিনি আর উইকেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানোর মানসিকতায় ছিলেন না। বিসিসিআই থেকে যে বার্তা এসেছে এবং লাল বলের ক্রিকেটে নিজের উপলব্ধিই হয়তো তাঁকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে দিয়েছে।’