টানা ১৫ দিন বাড়ির রান্না করা খাবার খাওয়াতে না পারার অপরাধে ৮ বছরের মেয়েকে কাছে রাখার অধিকার হারালেন বিবাহবিচ্ছিন্ন ব্যক্তি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে তাঁর মায়ের কাছে। বিচারপতি বিক্রম নাথ, সঞ্জয় করোল এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওই নাবালিকার সঙ্গেও কথা বলেছে। (আরও পড়ুন: পহেলগাঁও হামলার আবহে সীমার 'কাশ্মীর যোগ' নিয়ে বিস্ফোরক তাঁর স্বামীর আইনজীবী)
আরও পড়ুন: ভারত থেকে চলে যাওয়া পাকিস্তানিদের জন্যে মন কাঁদছে শাসকদলের নেতার, বললেন…
সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছে, ওই নাবালিকার বাবা একজন ব্যস্ত পেশাজীবী। তিনি একটানা ১৫ দিন মেয়ের সঙ্গে থাকার পরেও একটি দিনও তাকে ঘরের রান্না খাওয়াতে পারেননি।এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে ওঠার আগে কেরল হাইকোর্ট এক আদেশে বাবাকে প্রতি মাসে ১৫ দিনের জন্য মেয়েকে নিজের কাছে রাখার অনুমতি দিয়েছিল।জানা গেছে, পেশাগত কারণে ওই ব্যক্তি সিঙ্গাপুরে কর্মরত। তবে মেয়ের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তিনি প্রতি মাসেই সিঙ্গাপুর থেকে কেরলের তিরুবনন্তপুরমে আসতেন। সেখানে তিনি একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রতি মাসে ১৫ দিন মেয়ের সঙ্গে কাটাতেন। প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর তিনি বিমানে করে সিঙ্গাপুর থেকে ভারতে উড়ে আসতেন, শুধুমাত্র মেয়ের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য।
আরও পড়ুন-'মুসলিম-কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে যাবেন না!' দেশবাসীকে কাতর আর্জি নিহত নৌসেনা অফিসারের স্ত্রীর
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, বাবার প্রতি মেয়ের যথেষ্ট ভালোবাসা থাকলেও, শিশুকন্যার সুস্থ মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পক্ষে উপযুক্ত নয় বাবার বাড়ির পরিবেশ। বিচারপতি মেহতা বলেন, 'একজন প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রেও বাইরের খাবার দীর্ঘদিন খেলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ে, সেখানে আট বছরের শিশুর ক্ষেত্রে তার প্রভাব আরও গুরুতর।' সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, মেয়েটির সামগ্রিক স্বাস্থ্য, বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য পুষ্টিকর ঘরে রান্না করা খাবারের প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বাবা মেয়েটিকে এই ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করার মতো অবস্থানে নেই। আদালত জানিয়েছে, ওই মেয়েটির বাবাকে নিয়মিত ঘরে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য বলা যেতে পারত। কিন্তু ,মাসের ১৫ দিন বাবা ছাড়া ওই মেয়েটি অন্য কারোর সঙ্গ পেত না। দিনের পর দিন এই জিনিস তার মনের উপর অন্য ধরনে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বিচারপতিরা জানান, মেয়ের মা যেহেতু নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন এবং ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম করেন, তার ফলে সন্তানের দেখাশোনা, খাওয়াদাওয়া ও মানসিক বিকাশের জন্য যথেষ্ট সহায়ক পরিবেশ রয়েছে মায়ের বাড়িতে। তাছাড়া মেয়েটির একটি ছোট ভাইও আছে তিন বছর বয়সি, যার সঙ্গও মেয়েটির মানসিক বিকাশে বিশেষভাবে দরকার।
আরও পড়ুন: আতঙ্কে চোখের পাতা এক হচ্ছে না পাক পঞ্জাব থেকে খাইবারের, এরই মাঝে সরকারের পদক্ষেপ
সুপ্রিম কোর্টের আগে, কেরল হাইকোর্ট ওই তিন বছরের শিশুকেও প্রতি মাসে ১৫ দিনের জন্য বাবার সঙ্গে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়কে 'চরম অন্যায্য' বলে অভিহিত করে জানায়, এত ছোট শিশুকে মায়ের কাছ থেকে ১৫ দিন আলাদা করে রাখলে তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এখন থেকে বাবা মাসের দুটি উইকেন্ডে অর্থাৎ শনি-রবিবার মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে পারবেন এবং সপ্তাহে দু’দিন ভিডিও কলে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।