প্রকাশ্য দিবালোকে পিছু ধাওয়া করেছিল চার দুষ্কৃতী। হাতে ছিল পিস্তল। প্রাণ বাঁচাতে একটি দোকানে ঢুকে পড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। পিছু নিয়ে সেখানে পৌঁছে যায় দুই দুষ্কৃতী। তারপর মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালাতেই বৃহস্পতিবার খুন হলেন মালদার দাপুটে তৃণমূল নেতা দুলাল (বাবলা) সরকার। আজ শুক্রবার এই খুনের ঘটনায় আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল মালদা জেলা পুলিশ। তাঁদের মধ্যে মহম্মদ সামি আখতার নামের একজন বিহারের কাটিহারের বাসিন্দা। আর একজন টিঙ্কু ঘোষ ইংরেজবাজারের বাসিন্দা। আজ সকাল পর্যন্ত মোট গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়াল সাত।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের সঙ্গী এই দুলাল সরকার। শুধু তাই নয়, ইংরেজবাজার পুরসভার টানা ৩০ বছরের কাউন্সিলার তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ–সভাপতিও। এই নেতাকে হত্যার ঘটনায় শুধু মালদা নয়, রাজ্যজুড়ে তুমুল আলোড়ন পড়ে যায়। আজ সকালে হাসপাতাল থেকে দুলাল সরকারের দেহ ইংরেজবাজারের মহানন্দাপল্লীর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী এবং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্য নেতারা। বাড়ি থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইংরেজবাজারে তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিসে। আজ দুপুরেই দুলালের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
আরও পড়ুন: গার্ডেনরিচ বিপর্যয়ের ৯ মাসের মাথায় সিদ্ধান্ত বদল কলকাতা পুরসভার, কাজে যোগ তিন ইঞ্জিনিয়ারের
অন্যদিকে এই খুন নিয়ে পুলিশকে দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক থেকে কড়া ভাষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাবলার সিকিউরিটি তুলে নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সুপারের অপদার্থতার কারণেই খুন হতে হয়েছে আমার দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধাকে।’ ওই বৈঠক থেকেই রাজ্য মন্ত্রিসভার দুই সদস্য ফিরহাদ হাকিম এবং সাবিনা ইয়াসমিনকে মালদা পাঠিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘পুলিশ তদন্ত করে অপরাধী ধরবে। রং না দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আর আজ দুলালকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী পাঁচজনের গ্রেফতারের খবর দিয়ে বলেন, ‘পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। মোট ছ’জন ছিল। একজন পলাতক। ভাড়াটে খুনিদের নিয়োগ করা হয়েছিল। শুনেছি ১০ লক্ষ টাকার রফা হয়েছিল। পুলিশ বিষয়টি দেখছে।’
এছাড়া পুলিশ যে দু’জনকে বৃহস্পতিবার ধরেছিল তারা সুপারি কিলার বলে সূত্রের খবর। আর আজ যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা এদের সঙ্গে জড়িত। ঝাড়খণ্ডে পালানোর ছক ছিল দু’জনের। বাগবাড়ি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খুনের সময় ব্যবহৃত নম্বরপ্লেটহীন মোটরবাইকও। নিজের জীবন বাঁচাতে যে দোকানে ঢুকে পড়ে ছিলেন দুলালবাবু সেখানের সিসি ক্যামেরার ছবিতে পুলিশ দেখতে পেয়েছে, দোকানে থাকা দুই ব্যক্তি পালান। সেখানে ঢুকেই গুলি চালায় এক দুষ্কৃতী। লুটিয়ে পড়েন দুলাল সরকার। তখন তাঁর মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায় দু’জনে। অপারেশন চলাকালীন বাইরে পিস্তল হাতে পাহারায় ছিল এক দুষ্কৃতী। মোটরবাইক চালু অবস্থায় রেখে অপেক্ষা করছিল আরও একজন বলে পুলিশ সূত্রে খবর।