ভারতের থেকে ব্রহ্মোস মিসাইল কিনতে পারে ইন্দোনেশিয়া। রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্রুজ মিসাইল নিয়ে আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে ভারত। আর এরই মাঝে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ভারতে আসেন প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে। ২৬ জানুয়ারি দিল্লির কর্তব্যপথে তিনি যখন উপস্থিত ছিলেন, তখন তাঁর সামনে দিয়েই ভারতের ব্রহ্মোস মিসাইল চলে যায় প্যারেডে। এরই মাঝে টাইমস অফ ইন্ডিয়া একটি রিপোর্টে দাবি করল, ৪৫০ মিলিয়ন ডলারে এই ব্রহ্মোস মিসাইলের চুক্তি সম্পন্ন করতে পারে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। (আরও পড়ুন: 'ভারতীয় আগ্রাসন, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও...', ইস্যু এক, স্লোগান আরেক!)
আরও পড়ুন: খুলনায় হিন্দু পড়ুয়াকে খুনের ঘটনায় 'ঘনিষ্ঠ বন্ধু' গ্রেফতার, ক্রমে বাড়ছে রহস্য
ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর প্রধান মহম্মদ আলি ব্রহ্মোস এরোস্পেস সদর দফতরে গিয়ে সংস্থার সিইও জয়তীর্থ আর যোশীর সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন সম্প্রতি। সেই সময়ই নাকি ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধি দলকে ব্রহ্মোসের যাবতীয় শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত করেন ব্রহ্মোস প্রধান। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি মোদীর সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের বৈঠকে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে সমঝোতার ওপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। এই আবহে শীঘ্রই ব্রহ্মোসের এই চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই আবহে ফিলিপিন্সের পরে ইন্দোনেশিয়া দ্বিতীয় আসিয়ান দেশ হবে যারা ভারতের থেকে এই মিসাইল কিনবে। (আরও পড়ুন: নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সির গুরুদ্বারগুলিতে মার্কিনি অভিযান, কীসের খোঁজ চলছে?)
আরও পড়ুন: OpenAI-এর পর্দা ফাঁস করা বালাজির মৃত্যু ঘিরে ঘনীভূত রহস্য, সামনে এল ঘরের ছবি
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারত সফরে এসে ব্রহ্মোস মিসাইল কেনার বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করেছিলেন। প্রসঙ্গত, ব্রহ্মোস হল একটি মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে এই মিসাইল তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। এখন ভারত নিজের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এই মিসাইল তৈরি করতে শুরু করেছে। ভারত এখন ব্রহ্মোস মিসাইল বিদেশেও রফতানি করছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবেগ শব্দের গতিবেগের থেকেও দ্রুত। যুদ্ধজাহাজ ছাড়াও ডুবোজাহাজ, বিমান এবং স্থল থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষপণ করা সম্ভব। (আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্ক জুজুতে মথা নত, 'সব শর্ত মেনে' অবৈধ অভিবাসীদের ফেরাল কলম্বিয়া)
এর আগে ভারতের থেকে ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ব্রহ্মোস মিসাইল কিনতে চুক্তি সই করেছিল ফিলিপিন্স। সেই প্রথম ভারতে তৈরি অস্ত্র বিদেশে রফতানি করা হয়। উল্লেখ্য, ভারত ও রাশিয়ার যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি ব্রহ্মোস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রটির যান্ত্রিক সিস্টেম যুক্ত করা হয় হায়দরাবাদের ব্রাহ্মোস ইন্টিগ্রেশন কমপ্লেক্সে। এখানেই মিসাইলের ইলেকট্রনিক সিস্টেম একত্রিত করা হয়। তবে ২০২৩ সালে রাজনাথ সিং দাবি করেছিলেন, উত্তরপ্রদেশের ডিফেন্স করিডরেও ব্রহ্মোস মিসাইল তৈরি করা হবে। (আরও পড়ুন: ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধে উদ্বেগ, চিনে গিয়ে বাংলাদেশি উপদেষ্টা বলেন…)
আরও পড়ুন: সামরিক কর্তাদের সফরের পর এবার পাকিস্তানের পথে বাংলাদেশি নৌবাহিনীর জাহাজ
এদিকে ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি ফিলিপিন্সের প্রতিরক্ষা সচিব ডেলফিন লোরেঞ্জানা ভারতের ‘নোটিস অফ অ্যাওয়ার্ড’ (বিক্রির সম্মতি পত্র) সই করেন। ব্রহ্মোস আদতে একটি অ্যান্টি-শিপ মিসাইল সিস্টেম। ফিলিপিন্সের নৌসেনার ঝুলিতে এই মিসাইলগুলি যাচ্ছে। দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিংয়ের আগ্রাসনের মধ্যে ফিলিপিন্সের কাছে এই মিসাইলগুলি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। এই আবহে ফিলিপিনো নৌবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল মিসাইল কেনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরেই হায়দরাবাদে ব্রহ্মোস অ্যারোস্পেসের উৎপাদন ইউনিট পরিদর্শন করে যায়। এর আগে ২০১৯ সালে হিন্দুস্তান টাইমসই প্রথমবার খবর প্রকাশ করে জানিয়েছিল যে ফিলিপিন্স প্রথম দেশ হিসেবে ব্রহ্মোস কিনতে চলেছে ভারতের থেকে। এবার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া ভারত থেকে ব্রহ্মোস মিসাইল কিনতে চলেছে।
উল্লেখ্য, যখন প্রথম এই ক্ষেপণাস্ত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল, সেই মুহূর্তে এই ব্রহ্মোসই ছিল বিশ্বের দ্রুততম সুপারসোনিক (শব্দের থেকেও বেশি দ্রুত গতিসম্পন্ন) ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। শব্দের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বা ২.৮ মাখ গতিতে ছুটতে পারে ব্রহ্মোস মিসাইল। সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলের অ্যান্টি-শিপ সংস্করণ গত ২০২২ সালের এপ্রিলে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং আন্দামান ও নিকোবর কমান্ড যৌথভাবে সফলভাবে পরীক্ষা করেছিল।