মণিপুরের অশান্ত চান্দেল জেলায় মায়ানমার সীমান্তে বড়সড় সাফল্য পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। সেই এলাকায় এক অভিযানে ১০ জঙ্গিকে খতম করেছে অসম রাইফেলসের একটি ইউনিট। ভারত-মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত খেংজয় তহসিলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়েছিল। অভিযান চলাকালীন নিরাপত্তা বাহিনী এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছিল। সেই সময় জঙ্গিরা নিরাপত্তারক্ষীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পাল্টা জবাব দেন জওয়ানরাও। এরপরই এনকাউন্টার শুরু হয়ে যায়। এনকাউন্টারে ১০ জঙ্গি নিহত হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। (আরও পড়ুন: 'পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র…', কিরানা হিলস জল্পনার মাঝে এবার বড় দাবি রাজনাথের)
আরও পড়ুন: কর্নেল কুরেশিকে 'সন্ত্রাসীদের বোন' বলা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এবার পদক্ষেপ করবে BJP?
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড এক্স-এ এই অভিযানের তথ্য জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছে, '১৪ মে ২০২৫-এ, খেংজয় তহসিলের নিউ সামতাল গ্রামের কাছে সশস্ত্র ক্যাডারদের গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দারা জানতে পারেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে অসম রাইফেলসের একটি ইউনিট অভিযান শুরু করে। সংঘর্ষ চলাকালীন জওয়ানরা পাল্টা গুলি চালায়। এতে ১০ জঙ্গি নিহত হয় এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। অভিযান এখনও চলছে।' (আরও পড়ুন: 'একাত্তরের প্রতিশোধ' নাকি! হেরেও দেশকে 'বোকা' বানাচ্ছেন শেহবাজ শরিফ)
আরও পড়ুন: ভারতীয় ভূখণ্ডে বাংলাদেশিদের তাণ্ডব, সীমান্তে BSF জওয়ানের আঙুল কাটল দুষ্কৃতীরা
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই মণিপুরে কুকি এবং মৈতৈ জনজাতির মধ্যে সংঘাত বজায় রয়েছে মণিপুরে। গত ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছিল যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছিল স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এদিকে হাই মণিপুর হাই কোর্টে এই নিয়ে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, মৈতৈদের নাম তফশিলি উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখুক রাজ্য। এই নির্দেশিকার পরই জো-কুকি সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রতিবাদে নামেন। এই আবহে ২০২৩ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। পরে অবশ্য হাই কোর্ট সংরক্ষণ নিয়ে নিজেদের সেই পর্যবেক্ষণ ফিরিয়ে নেয়।
আরও পড়ুন: ভারত ভাগ চাওয়া বাংলাদেশি উপদেষ্টার মাথায় বোতলের প্রহার! মার খেয়ে মাহফুজ বললেন…
তবে এখনও মণিপুরে হিংসার আগুন নেভেনি। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছিল সেই রাজ্যে। এই আবহে গত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসেই চূড়াচাঁদপুর জেলায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে কুকি আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। আর এখনও পর্যন্ত সেই হিংসা প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশো সাধারণ মানুষ। বাফার জোন করে মৈতৈ এবং কুকিদের ভিন্ন এলাকায় রাখা হয়েছে। তার মধ্যেও মাঝে মাঝেই বাঁধছে সংঘাত। একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে দুই জনজাতি। এই আবহে বিজেপির সরকারই পড়ে যায় সেখানে। জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন।