পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বর্তমানে জেলবন্দি তিনি। কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গি হানা প্রসঙ্গে কী বললেন তিনি?
তিনি এই হামলাকে'গভীরভাবে বিরক্তিকর ও দুঃখজনক' বলে বর্ণনা করেছেন, তবে ভারতকে দায়িত্বশীল আচরণ করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এক বার্তায় প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি হতাহত ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি,’ মঙ্গলবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে বলেন ইমরান খান। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে।
‘যখন ফলস ফ্ল্যাগ পুলওয়ামা অপারেশনের ঘটনা ঘটেছিল, তখন আমরা ভারতকে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছিলাম কিন্তু ভারত কোনও দৃঢ় প্রমাণ হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৯ সালে যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর ফের একই ঘটনা ঘটতে চলেছে। আত্মসমীক্ষা ও তদন্তের পরিবর্তে মোদী সরকার আবার পাকিস্তানের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে,’ পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান আরও বলেন, ১৫০ কোটি মানুষের দেশ হওয়ায় ভারতকে ইতিমধ্যে ‘পারমাণবিক ফ্ল্যাশপয়েন্ট’ নামে পরিচিত একটি অঞ্চলের সাথে ঝামেলা করার পরিবর্তে দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।
তিনি বলেন, শান্তি আমাদের অগ্রাধিকার, তবে এটাকে কাপুরুষতা বলে ভুল করলে চলবে না। ভারতের যে কোনো দুঃসাহসিক কাজের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার সব সামর্থ্য পাকিস্তানের রয়েছে, যেমনটা গোটা জাতির সমর্থনে আমার সরকার ২০১৯ সালে করেছিল। একাধিক মামলায় ২০২৩ সালের অগস্ট থেকে জেলে থাকা ইমরান খান বলেন, জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে আমি সবসময় কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছি।
প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী আরও দাবি করেন যে তিনি এই সত্যটি তুলে ধরেছিলেন যে ‘আরএসএস মতাদর্শে পরিচালিত ভারত কেবল এই অঞ্চলের জন্যই নয়, এর বাইরেও মারাত্মক হুমকি’।
৩৭০ ধারা অবৈধভাবে বাতিলের পর কাশ্মীরে ভারতের নিপীড়ন আরও তীব্রতর হয়েছে, যা কাশ্মীরি জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, ফরম-৪৭ জালিয়াতির মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া অবৈধ সরকার জাতিকে বিভক্ত করেছে। দাবি প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর।
তা সত্ত্বেও পরিহাসের বিষয় নরেন্দ্র মোদীর আগ্রাসন পাকিস্তানের জনগণকে এক সুরে ঐক্যবদ্ধ করেছে। যদিও আমরা এই ভুয়ো শাসনব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করছি, আমরা একটি পাকিস্তানি জাতি হিসাবে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছি এবং মোদীর যুদ্ধপ্ররোচনা এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ তার বিপজ্জনক উচ্চাকাঙ্ক্ষার তীব্র নিন্দা জানাই।
ইমরান খান আরও জানিয়েছেন, বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিততে হলে আগে দেশকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি জানিয়েছেন, 'দেশকে আরও মেরুকরণ করছে এমন সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়। এই সংকটময় সময়ে রাজনৈতিক নির্যাতনের দিকে রাষ্ট্রের মাত্রাতিরিক্ত মনোযোগ অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও গভীর করছে এবং বাইরের হুমকি মোকাবিলায় জাতির সম্মিলিত ক্ষমতাকে হ্রাস করছে।
ক্ষমতাসীন পিএমএল-এন প্রধান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ জারাদরির সমালোচনা করে ইমরান খান বলেন, 'নওয়াজ শরিফ ও আসিফ জারদারির মতো স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোনো শক্ত অবস্থান আশা করা বোকামি। তারা কখনই ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলবে না কারণ তাদের অবৈধ সম্পদ এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ বিদেশে রয়েছে।
তারা বিদেশি বিনিয়োগ থেকে লাভবান হয় এবং সেই আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদেশি আগ্রাসন ও ভিত্তিহীন অভিযোগের মুখে তারা নীরব থাকে। তাদের আশঙ্কা সহজ: ভারতীয় লবি সত্য কথা বলার সাহস দেখালে তাদের অফশোর সম্পদ জব্দ করতে পারে।
ইমরান খানের এই মন্তব্য এমন সময় এসেছে যখন পাকিস্তান সরকার দাবি করেছিল যে তাদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে যে ভারত আসন্ন সামরিক হামলার পরিকল্পনা করছে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার রাতে বলেছেন, 'যে কোনো ধরনের আগ্রাসনের চূড়ান্ত জবাব দেওয়া হবে।
বুধবার সকালে এক বিবৃতিতে তারার বলেন, 'পাকিস্তানের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, পহেলগাঁওয়ের ঘটনাকে মিথ্যা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক হামলা চালাতে চায় ভারত।
গত সপ্তাহে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এই হামলার জবাব দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা’ দিয়েছিলেন।