ভোটের মুখে রেশন ডিলারদের একাধিক সুখবর দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের রাজ্য সম্মেলনে রেশন ডিলারদের জন্য একগুচ্ছ সুযোগ–সুবিধার কথা ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।প্রতি বছর রেশন দোকানের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করতে হয়। ডিলারদের সুবিধার্থে তা এবার থেকে প্রতি তিনবছর অন্তর করার কথা এদিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে সেই নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক বছর দেখতে দেখতে কেটে যায়। এটা এক বছরের জায়গায় তিন বছর করে দিতে হবে। ওদের সুবিধা হবে।’পাশাপাশি নতুন ডিলারশিপ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে কার্যনির্বাহী মূলধন প্রয়োজন পড়ে ৫ লক্ষ টাকা। এদিন প্রয়োজনীয় মূলধনের পরিমাণ কমিয়ে ২ লক্ষ টাকা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রেশন ডিলার, চাল, গমের মিলের মালিকদের নিয়ে ‘অন্নে অনন্যা বাংলা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে তিনি আরও জানান, ‘কাজ করতে করতে কোনও রেশন ডিলার যদি দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও ঘটনায় মারা যান তা হলে তাঁর পরিবার এককালীন ২ লক্ষ টাকা পাবে।’বাড়ানো হয়েছে রেশন ডিলার কমিশন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানান, ‘২০১৯ সালে ডিলার কমিশন ছিল ৫৪ টাকা প্রতি কুইন্টাল। এখন তা বাড়িয়ে ৭০ টাকা প্রতি কুইন্টাল করা হয়েছে। এর ৮০ ভাগ টাকা অগ্রীম দেওয়া হচ্ছে। কমিশন দেওয়ার পদ্ধতির সরলীকরণ করা হয়েছে।’ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘রেশন ডিলারের আকস্মিক মৃত্যু হলে তাঁর ছেলেমেয়ে ছাড়াও বিধবা স্ত্রী, বিবাহিত কন্যা, বিবাহবিচ্ছিন্ন কন্যা এবং বিধবা কন্যাকে দোকান চালানো লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে।’ পাশাপাশি তিনি জানান, রেশন ডিলারদের জন্য প্রায় ১২০০ শূন্যপদ ঘোষণা করা হয়েছে। বাছাই প্রক্রিয়া চলছে।মমতার অভিযোগ, ‘একটা–দুটো রেশন দোকানে একটু–আধটু গন্ডগোল হয়েছে আর তাই নিয়ে টিভি চ্যানেলগুলো এমন করেছে যেন লক্ষ লক্ষ রেশন দোকানে গন্ডগোল হয়েছে। অনেকে মিথ্যা কথা রটিয়ে দেয়। রেশন দোকানে গিয়ে হামলাও করেছে। এমন ঘটনাও আমাদের কানে এসেছে।’ এদিন কৃষক, খাদ্য দফতরের কর্মী, রেশন ডিলারদের ‘কোভিডযোদ্ধা’ হিসেবে সম্মানিত করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনার ওই সময়ে তাঁরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে গিয়েছে।’রেশন ডিলার ও খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দেন, ‘যেখানে রেশন বিলির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেখানে চলমান রেশন দোকান চালু করতে হবে। ই–রেশন চালু হয়ে গিয়েছে। লক্ষ্য রাখতে হবে, অনেকে রেশন নেয় না। যে রেশন নিচ্ছে না তার রেশন এন্ট্রি হয়ে যাচ্ছে, এটা যেন না হয়। সেই চাল কেউ বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এটা যেন না হয়।’মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আরও বলেন, ‘আমরা সকলের জন্য স্বাস্থ্য, সকলের জন্য ফ্রি রেশন দিচ্ছি। এটা আর কোনও রাজ্যে নেই। একমাত্র রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। এই চালটা আমরা চাষীদের কাছ থেকে কিনি। সরকারের ৩১ টাকা খরচ পড়ে, কিন্তু আমরা সেই চাল বিনামূল্যে মানুষের হাতে তুলে দিই। লোকে যদি বলে রেশনের চালটা খুব ভাল। তা শুনে আমাদের গর্ব হয়। কারণ, আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরাই তো তা খায়।’