আফগানিস্তান মহিলা একাদশের ম্যাচকে ‘আশার আলো’ বললেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নিক হকলি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী নিক হকলি বলেছেন, মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত আফগানিস্তান মহিলা একাদশের প্রীতি ম্যাচটি শুধু একটি খেলা নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফগানিস্তান মহিলা দলের ফিরে আসার পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে চলেছে। এটাকে আশার প্রতীক হিসাবে দেখছেন অনেকেই।
আফগানিস্তান মহিলা একাদশ দল বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত শরণার্থীদের দল যেটি ক্রিকেট উইদাউট বর্ডার্স একাদশ নামে পরিচিত, তাদের বিরুদ্ধে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে। ম্যাচটি বৃহস্পতিবার সকালে জাংশন ওভালে অনুষ্ঠিত হবে। এই ম্যাচের পরেই মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (MCG) শুরু হবে মহিলা অ্যাশেজ টেস্টের প্রথম দিন-রাতের ম্যাচ।
২০২১ সালে তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর, আফগান মহিলা ক্রিকেট দলটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। অনেক খেলোয়াড় অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা ও মেলবোর্নে আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘ তিন-চার বছর পর, এই ম্যাচটি তাদের ক্রিকেটীয় যাত্রার এক নতুন সূচনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন… নীরজের মত আরও সোনার ছেলে তুলে আনতে প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জ্যাভেলিন থ্রোয়ারকে কোচ করল ভারত
সোমবার, জাংশন ওভালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নিক হকলি, আফগান মহিলা দলের ক্যাপ্টেন নাহিদা সাপান ও খেলোয়াড় ফিরোজা আমিরি উপস্থিত ছিলেন। সাপানকে ম্যাচের ক্যাপ্টেন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছ। নিক হকলি জানান, এই ম্যাচটি আফগান মহিলা ক্রিকেটারদের জন্য ভবিষ্যতে আরও সুযোগ তৈরি করবে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ECB) ইতিমধ্যে তাদের সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এবং ইংল্যান্ডের মহিলা দলের অধিনায়ক হিদার নাইট সম্প্রতি মেলবোর্নে আফগান খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করেছেন।
হকলি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি প্রথম ধাপ। ECB থেকে সহকর্মীরা মহিলা অ্যাশেজ দেখতে আসছেন, এবং ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া উভয় দেশের পক্ষ থেকে সমর্থনের আলোচনা চলছে। এই ম্যাচটি শুধু একটি খেলা নয়, বরং এটি মহিলাদের জন্য আরও সুযোগ তৈরির একটি বার্তা। আশা করি, এটি একটি বার্ষিক ইভেন্ট হয়ে উঠবে এবং একদিন এই দলটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কেউই বুঝতে পারি না, কী কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তারা এসেছে—একটি নতুন দেশে আসা, ভাষা না জানা। কিন্তু তাদের দৃঢ় মনোবল ও ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।’ আফগান মহিলা খেলোয়াড়দের আবেগকে তুলে ধরেন নাহিদা সাপান। তিনি মেলবোর্নের কার্নেগি ক্লাবে ক্রিকেট খেলেন, এবং ফিরোজা আমিরি, যিনি ড্যান্ডেনং ক্লাবের হয়ে খেলেন, তারা এই ম্যাচে খেলার আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন… SL vs AUS 1st Test: শ্রীলঙ্কায় অন্য ভূমিকায় মাঠে নামবেন ট্র্যাভিস হেড! কী ইঙ্গিত দিলেন স্টিভ স্মিথ?
সাপান বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত, বিশেষ করে আফগান মহিলাদের জন্য। এটি আমাদের জন্য ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত। আমাদের অনেক বড় স্বপ্ন রয়েছে এই ম্যাচ নিয়ে। এটি আফগান মহিলাদের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা এবং ভবিষ্যতের নতুন দরজা খুলতে পারে। আমরা চাই না যে এটি আমাদের প্রথম এবং শেষ ম্যাচ হোক—আমরা আরও ম্যাচ খেলতে চাই, আরও সমর্থন চাই।’
ফিরোজা আমিরি বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানে থাকা লক্ষ লক্ষ মহিলার প্রতিনিধিত্ব করছি, যারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তিন বছর পর আমাদের একসঙ্গে হওয়া, সবকিছু ফেলে আসা এবং নতুনভাবে শুরু করা সত্যিই আবেগপ্রবণ। আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত, আমরা জয়ের জন্য মাঠে নামছি।’
আরও পড়ুন… কীভাবে টিম ইন্ডিয়ার নেতৃত্ব ফিরে পাবেন হার্দিক? পান্ডিয়াকে রাস্তা দেখালেন সঞ্জয় মঞ্জরেকর
আফগানিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়া প্রতিযোগিতা
বর্তমানে আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে না অস্ট্রেলিয়া। তবে আইসিসির টুর্নামেন্টগুলিতে উভয় দলই অংশ নেয়। আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য) তারা একে অপরের মুখোমুখি হবে। হকলি এবং আয়োজকরা আশা করছেন, এই প্রতীকী ম্যাচটি বিশ্বজুড়ে আলোচনার সূত্রপাত করবে এবং আফগান মহিলা ক্রিকেটারদের দৃঢ় মনোবল ও ক্রিকেটের প্রতি তাদের ভালোবাসা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবে।