ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বড়বাজারের হোটেলে। একেবারে হাড়হিম করা ঘটনা। ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেলেন একের পর এক পর্যটক। ভিনরাজ্যের অনেকেই বাংলায় এসে উঠেছিলেন ওই হোটেলে। কিন্তু মঙ্গলবারের আগুন লাগার পরে কার্যত গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয় গোটা হোটেল। মেছুয়ার ফলপট্টির ওই হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কার্যত দমকলের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
মেছুয়ার ফলপট্টির ওই হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে সব মিলিয়ে মারা গিয়েছেন ১৪জন। মৃতদের জন্য এক মহিলা ও দুই শিশুও রয়েছে। অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। এদিকে প্রাণ বাঁচাতে হোটেলের কার্নিশে নেমে পড়েছিলেন। হোটেলের পাঁচতলার কার্নিশে দু ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেন তারা। এমনকী অত উঁচুতে দমকলের সিঁড়িও পৌঁছয়নি। সেই পরিস্থিতিতে প্রাণ হাতে করে অপেক্ষা করতে হয় তাঁরা।
বড়বাজারের ঋতূরাজ হোটেলের এই ঘটনা কার্যত ফের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল কলকাতার হোটেলের অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাকে। এমনকী হোটেলের উপর পানশালা করা হচ্ছিল বলেও খবর।
এবিপি আনন্দে সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন এক দম্পতি। কোনওরকমে বেঁচে যাওয়া হোটেলের এক মহিলা আবাসিক বলেন, খুব ভয় লাগছিল। ৯টা সাড়ে ৯টা নাগাদ হবে। আমরা কার্নিশে নেমে আসি। দমকলের সিঁড়ি পাঁচতলায় পৌঁছয়নি। তাঁর স্বামী বলেন, ফোর্থ ফ্লোর পর্যন্ত মই গিয়েছিল। আমাদের দড়ি বাঁধার জন্য বলা হয়েছিল। তবে ঘণ্টা দুয়েক তাঁদের ওইভাবে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কিন্তু হোটেলের তরফে কোনও সহায়তা মেলেনি।
একেবারে হাড়হিম করা ঘটনা।
হোটেলে দাউ দাউ করে আগুন। তার সঙ্গেই কালো ধোঁয়ায় চারদিক ভরে যায়। বের হওয়ার জন্য় একটাই সিঁড়ি। সেখান দিয়ে নামতে গেলে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারে। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে যেতে পারে। এরপরই কোনওভাবে কার্নিশে নেমে আসেন ওই দম্পতি। যেকোনও সময় বড় দুর্ঘটনা হতে পারত। কিন্তু কার্নিশে নামা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও পথও ছিল না।
অগ্নিকাণ্ডে একেবারে মৃত্যু মিছিল। আগুন থেকে বাঁচতে কয়েকজন ঝাঁপও দিতে শুরু করেছিলেন। একের পর এক মৃত্যু বাড়তে থাকে। বড়বাজারের ওই হোটেল কার্যত জতুগৃহ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেন এতদিন কোনও নজরদারি হয়নি?
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে দমকল। কয়েকদিন একটু নজরদারি চলে। কিন্তু তারপর পরিস্থিতি আবার যে কে সেই।
এদিকে মৃতদের মধ্য়ে অনেকে বিহারের বাসিন্দা। এসবের মধ্য়েই খবর মিলেছে হোটেলের ম্যানেজারকে আটক করা হয়েছে। তবে হোটেলের মালিক এখনও পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।