এই গরমে ফুল ফুটুক না ফুটুক প্রেক্ষাগৃহে 'দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা' দেখতে গেলেই পাবেন বসন্তের ছোঁয়া। তবে এই বসন্তে𝓡 আ💮বির নেই, আছে ভস্ম আর শিবের তান্ডব। সঙ্গে আছে বেনারসের ঘাট, আরতি, অলি-গলির গোলকধাঁধা আর 'থ্রি মাস্কেটিয়ার্স'-এর অনবদ্য অভিযান। সঙ্গে উপরি পাওনা ছবির প্রেক্ষাপট, তা যেন দেশের বর্তমান পরিস্থির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে তাতে গুরুগম্ভীর ভাব নেই। আসলে যেখানে 'একেন' থাকে, সেখানে গুরুগম্ভীর ভাব থাকবেই বা কী করে। হাসি মজার ছলেই যে সে রহস্যভেদ করবে সে, তা তো বলাই বাহুল্য। সিরিজেও তাই তো হয়। কিন্তু এবার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে তবে, বড় পর্দায় কেন দেখতে যাবেন 'একেন'? সেই উত্তরই দেবে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।
'দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা'-এর গল্প
প্রথমেই আসা যাক ছবির গল্পে। আর পাঁচটা 'একেন' সিরিজের মতো এই ছবির গল্প রহস্যে মোড়া হলেও, 'দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা'র সব থেকে বড় বিশেষত্ব হল শুরুতেই ভিলেন কে, তা জেনে যাবেন দর্শকরা। 🌃'একেন'-এর অন্যান্য গল্পের মতো শেষে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। ছবির শুরুই হবে 'বেনারসে ব্লাস্ট' দিয়ে। শান্তির শহর বেনারস সন্ত্রাসবাদী 'বেলাল মল্লিক' ও তার দলবলের দৌড়াত্বে আতঙ্কিত। শহর জুড়েই চলছে চাপা উত্তেজনা। তাঁর মাঝেই 𒀰পর্দার 'সুবিমল' গৌরবের (গৌরব চক্রবর্তী) আমন্ত্রণে বেনারসে হোলি দেখতে হাজির হয়, 'একেন', 'প্রমথ' ও 'বাপি'। তবে ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙে, তেমন গোয়েন্দারা ঘুরতে গিয়েও রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়ে, আর এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে শুরু থেকেই 'বিলাল', 'একেন'-এর লক্ষ ছিল না। সে কেবল ঘোরার মেজাজেই ঘুরছিল। আর তার সঙ্গে চিরাচরিত ভাবে জড়িয়ে ছিল লস্যি, কচুরি, চাট, বেনারসী পান-সহ রকমারি সব পদ।
🌞কিন্তু তার মাঝেই 'সুবিমল'-এর কাকা 'বীরেশ্বর'-এর অনুরোধে তার ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা সমাধান করতে যায় একেন। 'বীরেশ্বর'-এর ছবি ও অ্যান🅘্টিককের নেশা রয়েছে। তবে পাশাপাশি রয়েছে ভুলে যাওয়ার রোগও। আর তাই মাঝে মাঝেই তার সংগ্রহ থেকে খোয়া যায় না না জিনিস। 'বীরেশ্বর'-এর বাড়িতে সে ছাড়া থাকে তার ভাইপো 'সুবিমল', স্ত্রী 'দামিনী' আর তার পার্সোনাল সিএ 'সমীরণ'। তাই খুব স্বাবাবিক ভাবেই 'একেনবাবু'র সন্দেহের তালিকায় ঢুকে যায় তারা।
তারপরই একের পর এক খুন হয় বেনারসে। মৃত্যু হয় 'বীরেশ্বর'-এরও। আর এই রহস্য উদ্ঘাটনের জেরে 'বেলাল'-এর কেসেও জড়িয়ে পড়ে 'একেন'। যদিও একের পর এক বোমাবাজির ঘটনায় উতক্ত্য বেনারসকে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ থেকে উদ্ধার করতে, 'একেন'-এর আসার বহু আগে থেকেই তৎপর ছিল প্রসাশনের কর্মকর্তারা। কিন্তু সেখানে 'একেন'-এর বুদ্ধিমত্তা যে, তাঁদের কাজকে আরও কয়েক গুণ সহজ করে দেয় তা বলাই বাহুল্য। আর শেষ পর্যন্ত যে, 'একেন'-এর জালে দুঁদে সন্ত্রাসবাদী 'বেলাল' ধরা🍌 পড়ে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কী ভাবে 'বেলাল'-এর মতো সন্ত্রাসবাদীকে নিজের জালে 'একেন' কীভাবে ধরে সেটাই দেখার। আর ক্লাইম্যাক্সের এই অংশটাই ছবির সব থেকে আকর্ষণীয় অংশ।
অভিনয় কেমন লাগল?
'একেন'-এর চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী যে অনবদ্য🐲 তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁকে ছাড়া বাঙালি আর 'একেন্দ্র সেন' হিসেবে কাউকে ভাবতেই পারেন না। আর তাঁর সঙ্গে তাঁর দুই সহচর 'প্রমথ'-এর চরিত্রে সোমক ঘোষ ও 'বাপি' সুহোত্র মুখোপাধ্যায়ই একেবারেই যথার্থ। সিরিজ হোক বা ছবি, তাঁদের কেমিস্ট্রি সকলেই মন কাড়ে বার বার, আর এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। পর্দায় তিন মূর্তি একসঙ্গে হাজির হলে দর্শকদের চোখে আনন্দের ঝলক খেলতে বাধ্য। এবার আসা যাক এই ছবির নতুন সংযোজন অর্থাৎ বাকি যে সব চ🐼রিত্রদের দেখা যাবে তাদের কথায়। প্রথমেই যাঁর কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়। পুলিশ অফিসারের চরিত্রে তিনি অনবদ্য। তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে শুরু করে, তাঁর হিন্দি বলার ধরণ। তাঁর হিন্দি শুনে বোঝার উপায় নেই যে তিনি বাঙালি।
এরপর আসা যাক ছবির ভিলেন 'বিলাল মল্লিক' অর্থাৎ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গে। এই ছবিতে প্রকৃত অর্থেই তিনি বহুরূপী, নানা রূপে নানা মেজাজে ধরা দিয়েছেন তিনি। আর শাশ্বত যেমন সাবলীল অভিনয় করে থাকেন, তেমনটা এক্ষেত্রেও করেছেন। সঙ্গে পর্দার 'দামিনী' ইশা সাহার মুখে উত্তরপ্রদেশের হিন্দি বেশ মাননসই। যতটুকু স্ক্রিন টাইম পেয়েছেন অভিনেত্রী তার মধ্যে বেশ ভালো করেছেন। গৌরব চক্রবর্তীকে যে ধরনের চরিত্রে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দর্শকরা দেখেছেন, খানিটা তেমন ভাবেই তাঁকে পাওয়া যাবে। তিনিও নিজের জায়গায় বেশ ভালো পারফর্মেন্স দিয়েছেন। সঙ্গে ঋষভ বসু ও বিশ্বনাথ ဣবসুও বেশ ভালো। তাছাড়াও এই ছবির হাত ধরে প্রথমবারের জন্য বড় পর্দায় স্বীকৃতি মজুমদারকে দেখতে পাবেন দর্শকরা। খুব বেশি তাঁর স্ক্রিন টাইম ছিল না। কিন্তু 'রাধিকা' হিসেবে🉐 বেশ যথাযথ তিনি।
ওভারঅল কেমন লাগল?
'একেন' মানেই হাসির মোড়কে রহস্য সমাধান, এই ছไবিও তার ব্যতিক্রম নয়। একেন ভক্তরা যা চায় এই ছবি ঠিক তাই। আর 'দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা'-এর সব থেকে বড় উইএসপি হল ছবিটা সব ধরনের দর্শকদের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছে। আট থেকে আশি সকলের একসঙ্গে বসে দেখার মতো একটা ছবি। আর এর পুরো কৃতিত্বই যায়, চিত্রনাট্যকার পদ্মনাম দাশগুপ্ত ও পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। ছবিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার একটা দিক আছে ঠিকই, তবে তা এতটাও গুরুগম্ভীর নয়। তাই ছোটোরাও এই ছবি বুঝবে। পাশাপাশি যে ভাবে ছবির গল্প এগোবে, তাতে প্রাপ্তবয়স্করাও বেশ উপভোগ করবেন। সব ধরনের দর্শকদের কথা মাথায় রেখে হালে খুব কম ছবি হতে দেখা গিয়েছে, তাঁর মধ্যে 'দ্য একেন বেনারসে বিভীষিকা' অন্যতম হয়ে থাকবে।
সিনেমার শুরুতে খলনায়ককে দর্শকরা দেখে নিলেও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা চাপা উত্তেজনা ও সাসপেন্স কাজ করবে। আর তার পাশাপাশি 'একেন'-এর হাস্যরস দর্শকদের কোনও ভাবেই ছবি একঘেয়ামি লাগতে দেবে না। তবে কেবল এটুকু বলে শেষ করে দিলে, ছবির অনেক কথাই বলা বাকি থেকে যাবে। 'দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা'-এ পরিচালক যেভাবে বে🙈নারসকে তুলে ধরেছেন তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। ঘাট থেকে আরতি, বেনারসের অলিগিলি, প্রাচীন শহরে রাতের মায়া আপনার মনকে শান্ত করে দেবে। আর সব থেকে বেশি যা নজর কাড়বে তা হল 'মাসান হোলি', সেই😼 সময় বেনারসের অলি-গলি, মণিকর্ণিকা-সহ অন্যান্য ঘাটের উন্মাদনা, এই ঘোর গ্রীষ্মেও মনকে বসন্তে উত্তেজনা অনুভব করাবে। আর এই মাসান হোলিতে ছবির ক্লাইম্যাক্স ও একেন বাবুর 'ত্রিশূলধারী রুদ্ররূপ' এই গরমে ঠান্ডা লস্যির মতোই মনজুড়িয়ে দেবে।
পাশাপাশি ক্লাইম্যাক্স দেখতে দেখতে এও মনে হতেই পারে, যেন চট করেই বুঝি শেষ হয়ে গেল। আরও একটু চললে মন বেꦯশি তৃপ্ত হত। তবে বহু বাংলা ছবির মতো এই ছবিতেও ফের 'ফেলুদা'র প্রসঙ্গ না টানলেও চলত। 'একেন বাবু' তার নিজের কৃতিত্বেই সেরা। তাই সেই অংশটুকু অপ্রয়োজনীয় বল🍨েই অনেকের মতে হতে পারে।
তবে সব মিলিয়ে ছবিতে রহস্য খুব জটিল না হলেও 'একেন'কে যেভাবে দর্শকরা দেখে এসেছেন এই▨ ছবিতে একেবারে সেই নির্যাস পাবে। তবে বড় পর্দায়, আরও বড় স্তরে তা অনুভব করার সুযোগ পাবে। ছোটদের দেখার মতো ছবি বর্তমানে বড় একটা আসে না। তাই গরমের ছুটিতে যদি বাড়ির খুদেকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে সময় নাও পান। তাহলে 'দ্য একেন বেনারসে বিভীষিকা' দেখিয়ে নিয়ে আসতেই পারেন, তাতে তার মন বেশ ✅অনেকটাই ভরবে, টান টান উত্তেজনা অনুভব করবেন আপনিও।