প্রিয়জনকে হারালেন মধুবনী গোস্বামী! শুক্রবার সমাজমাধ্যমের পাতায় নিজেই একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে অনুরাগীদের সঙ্গে এই দুঃসংবাদ ভাগ করে নিলেন নায়িকা। মোটা দাদাকে হারিয়েছেন তিনি। নিশ্চয়ই ভাবছেন কে এই 'মোটা দাদা'? তিনি হলেন মধুবনীর ঠাকুরদা। বৃহস্পতিবার🍸 নায়িকা তাঁকে হারিয়েছেন।
শুক্রবার ভিডিয়ো পোস্ট করে মধুবনী☂ বলেন, 'আমি আমার পরিবারের একজনকে হারাই গতকাল। সেই মানুষটা আমার খুব কাছের ছিল। ওঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। আমার ঠাকুরদা তিনি চলে গেলেন। আমি তাঁকে দাদা বলতাম। আসলে খুব ভালোবেসে আদর করে মোটা দাদা বলতাম। তিনি একদমই মোটা ছিলেন না, কিন্তু ভালোবেসে ওঁকে ওই নামে আমি ডাকতাম। ওঁর ৯৩ বছর বয়স হয়েছিল।'
তারপরই নায়িকা জানান ছোট থেকে তাঁর মোটা দাদা কীভাবে তাঁকে নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন। মধুবনীর কথায়, 'আমি যখন দশম শ্রেণিতে বোর্ডের পরীক্ষা দিতে যেতাম, তখন তিনি আমাকে গাড়ি করে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যেতেন। দাদা তখন খুব স্ট্রং ছিলেন। আর দাদা আমার কাছে সব সময় স্ট্রং হয়েই থাকবেন।🦋 আমি যে বই পড়তে ভালোবাসি, সেটাও আমার দাদার থেকেই পাওয়া। দাদা আমাকে প্রচুর বই কিনে দিতেন। সেই বইগুলো পড়ে পড়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা তৈরি হয়। আমি যে ভালো রেজান্ট করতাম তার সব কৃতিত্বই যায় আমার দাদার কাছে।'
তবে অভিনেত্রীর ঠাকুরদা কেবল যে বই পড়তে ভালোবাসতেন তেমনটা নয়, গান শুনতেো খুব ভাল✅োবাসতেন। তিনি প্রাক্তন আই এস অফিসার ছিলেন। মধুবনীর বলেন, 'আমার দাদা প্রাক্তন আই এস অফিসার। পড়াশোনায় ভীষণ ভালো ছিলেন। এম এ করেছিলেন, তারপর ইকোনমিক্সে পিএচডি করেছিলেন। তিনি খুব মুক্ত মনের মানুষ ছিলেন। কোনও কুসংস্কার ছিল না ওঁর মধ্যে। দাদাকে আর দেখতে পাবো না। কিন্তু ওঁর শিক্ষা সারা জীবন আমার সঙ্গে থেকে যাবে।'
তিনি আর বলেন, 'ওঁর বেশ কিছু অভ্যাস আমি আমার জীবনে যোগ করতে চাই। যেমন দাদা অবসর সময় খুব পড়তে ভালোবাসতেন, খুব গান শুনতে ভালোবাসতেন। তিনি সব সময় সব বিষয়ে নিজেকে আপডেটেট রাখতেন। আমি সেই ভাবেই আমার নিজের জীবনে এবং কেশবের জীবনে সেগুলো যোগ করতে চাই। আর দা🐼দা যেভাবে আমাকে পড়াশোনাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছি🔯লেন, আমিও কেশবকে তেমন করেই শেখাতে চাই। এটাই হবে আমার দাদা প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি। এখন প্রচুর কাজের মাঝে আমার কিছুতেই বই পড়া হয় না। আমি এবার থেকে সব কাজের মাঝেও এর জন্য সময় বের করতে চাই। তাহলে দাদাও খুশি হবেন।'
পাশাপাশি মধুবনী তাঁর ছেলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, 'বাবার বাড়ি যখন যেতাম তখন ওঁর সঙ্গে দেখা হত। তিনি উপরে থাকতেন। কেশবকে খুব ভালোবাসতেন। কেবশ আমার বাবার বাবাকে দেখতে পেয়েছেন। এটা তো মুখের কথা নয়। বর্তমান সময়ে সবাಌই বাবা বা ময়ের ঠাকুরদা ঠাকুমাকে দেখার সুযোগ পায় না। আমার দাদাকে কেশব দেখল। আমার দাদাও কেশবের জন্ম দেখে যেতে পারল। কেশব কিছুদিন আগেই স্কুলে ভর্তি হয়েছে, সেটাও দাদা দেখেছেন, আর খুব খুশিও হয়েছিলেন।'
তবে এই সব কিছুর মধ্যেও খানিক আফসোস রয়ে গিয়েছে অভিনেত্রীর। তিনি বলেন, 'দাদা যত দিন বেঁচে ছিলেন আমাকে বলতেন মাম একটা গান পাঠাও না শুনি। তখন আমি বলতাম আমি একটু ফাঁকা হই, আমার কাজের চাপ আছে। দাদা আমার পুরানো রেকর্ড করা গানগুলো শুনতেন। তিনি আমার গান শুনতে খুব ভালোবাসতেন। যখনই যেতাম বলতেন, তুমি কিন্তু পাঠালে না আমাকে গানগুলো। আমি বলতাম ঠিক পাঠিয়ে দেব। আমার ফাঁকাও আর হওয়া হল না, আর পাঠানোও হল না, দাদা চไলে গেলেন।'
তাই ভিডিয়োর একদম শেষে দাদার জন্য গানও করেন মধুবনী। আর বলেন, 'এটা তোমার জন্য। হয়তো কোথাও থেকে বসে তুমি শুনছো। তোমায় গান রেকর্ড করে পাঠানোꦉর সময় তো হল না, কিন্তু এখন তুমি যখন নেই... হয়তো আবার দেখা হবে। যতদিন না হচ্ছে ততদিন তোমার জীবনের ভ্যালু সব কিছু আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করব। যেখানেই থেকো ভালো থেকো।'
শেষ মধুবনী এও বলেন, 'তবে আমি আর কাঁদব না। দাদা ওঁর পুরো জীবনটা খুন আনন্দে কাটিয়ꩵেছেন। আর আমি সত্যি এই এর জন্য খুব খুশি। তিনি সাঁরা জীবনটাকে উপভোগ করে ৯৩-এ মারা গেলেন। তাই আক্ষেপের কোনও জায়গাই নেই। কিন্তু আমরা কাঁদছি কারণ, তিনি আমাদের মনের খুব কাছের একজন মানুষ ছিলেন। তিনি আমাদের খুব ভালোবাসতেন, আমরাও ভালোবাসতাম। তিনি যে খুব অসুস্থ ছিলেন বা ভুগছিলেন তেমনটা নয়। তিনি প্রকৃতির নিয়মে চলে গিয়েছে। এখন থেকে আমার জীবনের প্রতিটা কাজে প্রতিটা ক্ষেত্রে দাদাকে মনে রাখব। তিনি যে ভাবে জীবনটা কাটিয়েছেন, সমস্ত দায়িত্ব কর্তব্য সামলেও নিজের মনে খিদেটা মিটিয়েছেন। সেই সবটাই ওঁর থেকে শেখার, আমি এখনও শিখছি।'