মধ্যদিবসে শুরুটাই হয়েছিল প্রবল প্রতিরোধের মধ্যে দিয়ে। আর, দিনের শেষে রাত নামার পরও ফের চড়ল উত্তেজনার পারদ! সল্টলেকের বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারা 'যোগ্য' শিক্ষক শিক্ষিকাদের আন্দোলনের জেরে আজ (বৃহস্পতিবার - ১৫ মে, ২০২৫) বেলার দিকে (দুপুর ১২টা নাগাদ) ভেঙেছিল আস্ত গেট, আর রাতে সেখানেই মাথা ফাটল এক আন্দোলনকারীর, ইটের ঘায়ে চোখে আঘাত পেলেন পুলিশের এক কর্মীও। কম-বেশি জখম হলেন আরও অনেকে।
চাকরিহারা 'যোগ্য' শিক্ষক শিক্ষিকারা কেউ আর নতুন করে পরীক্ষা দেবেন না। পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ ছাড়াই তাঁদের স্বপদে, সসম্মানে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মূলত এই দাবি নিয়েই এদিন বিকাশ ভবন ঘেরাও করেন 'যোগ্য'রা। তাঁদের একাংশের বিরুদ্ধে এদিন দুপুরে বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ার অভিযোগ ওঠে। মাঝে বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত সেখানে পৌঁছলে, তখনও উত্তেজনা ছড়ায়। কিন্তু, তারপর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মোটামুটি সব শান্ত ছিল।
কিন্তু, ৮টা নাগাদ পুলিশের সংখ্যা বিকাশ ভবনের সামনে হঠাৎ বেড়ে যায়। একইসঙ্গে আন্দোলনকারীদের জোর করে হটানোর অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে, দিনভর বিকাশ ভবনে কার্যত বন্দি হয়ে থাকা কর্মী ও আধিকারিকদের একে একে বের করে আনা হয়। জানা গিয়েছে, কর্মীদের বের করে আনার সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। কিন্তু, রাত ১০টা পর্যন্ত অন্তত অশান্তি মেটেনি। পুলিশের বিরুদ্ধে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের উপর লাঠিচার্জের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ লাঠির ঘায়ে এক আন্দোলনকারীর নাকি মাথা ফেটে গিয়েছে!
অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেও পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল, এমনকী ফুলগাছের টব পর্যন্ত ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। যার জেরে এক পুলিশকর্মীর চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে বলে শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে দুই তরফে অনেকেই আহত হয়েছেন বলে খবর। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অনেকে আহত হলেও অ্যাম্বুল্য়ান্স পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের উদ্দেশে আন্দোলনকারীরা 'গো ব্যাক' স্লোগানও দেন।
এই প্রেক্ষাপটে রাত ১০টা বাজার কিছুটা আগে বিকাশ ভবনের সামনে থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডিসি বিধাননগর অনীশ সরকার। তিনি বলেন, 'এর আগে আচার্য সদনেও ওঁরা অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন। এখানেও অনেকক্ষণ ধরে অবস্থানে বসেছিলেন। আমরা সহযোগিতা করেছি। সকালে বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ওঁরা ঢুকে পড়েছিলেন। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। ওঁদের অনেক বোঝানো হয়েছে। বিকাশ ভবনে অনেক দফতর রয়েছে, বহু কর্মী ভিতরে আটকে ছিলেন। তাঁদের অনেকের শারীরিক সমস্যাও আছে। বিক্ষোভকারীরা ওই সরকারি কর্মীদের বেরোতে দিচ্ছিলেন না। আমরা অনুরোধ করি। কিন্তু ওঁরা অনড় ছিলেন। আমরা ভিতরে আটকে পড়া কর্মীদের বের করার চেষ্টা করলে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। আমাদের দিকে ইট, পাটকেল, টব ছোড়া হয়। তাতে ওঁদেরও অনেকে আহত হয়েছেন। আস্তে আস্তে সরকারি কর্মীদের বের করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। নানাভাবে ওঁরা আমাদের কাজে বাধা দেন। কর্মীদের বেরোতে দিচ্ছিলেন না। আমাদের তাই কর্মীদের বের করতে বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে হয়েছে।'
অন্যদিকে, বিধাননগর কমিশনারেটের জয়েন্ট সিপি হেডকোয়ার্টার বদনা বরুণ চন্দ্রশেখরও বিকাশ ভবন চত্বরে আসেন। ভবনের পিছনের দিকের গেটে এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা তথ্য অনুসারে, ক্রমে বিকাশ ভবনের পিছনের অংশে অবস্থিত ৩ নম্বর গেটে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা কমছে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন জায়গায় বসে রয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।